১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো। এরপর সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে তোমার উত্তর সংশোধন করো।
১। 'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতায় কবি কী বলতে চেয়েছেন?
______________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
২। 'আমি কোনো আগন্তুক নই।'-কেন কবি এমন কথা বলেছেন?
______________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
৩। বাংলাদেশের প্রকৃতি তোমাকে কখনো মুগ্ধ করেছে কি না? কখন, কীভাবে মুগ্ধ করেছে?
______________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
৪। মনে করো, ক্লাসে একজন শিক্ষার্থী নতুন ভর্তি হয়েছে। তখন সবাই তাকে এড়িয়ে চলছে, কেউ তার সঙ্গে কথা বলছে না। এর ফলে তার মনে যে বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি হয়, তা কীভাবে দূর করা সম্ভব বলে তুমি মনে করো?
______________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতার বৈশিষ্ট্য
১। বাংলাদেশের মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা এই কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
২। এটি কয়েকটি স্তবকে বিভক্ত একটি গদ্য কবিতা। কবিতায় চরণের শেষে মিল পাওয়া যায় না। মাকে মাঝে এক চরণের মাঝখানে শুরু হওয়া বাক্য পরের চরণে গিয়ে শেষ হয়েছে।
৩। কবিতাটিতে পুনরাবৃত্ত অনুপ্রাস দেখা যায়: 'আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন'-এখানে 'চ', 'জ' ও 'ন' ধধ্বনির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এটি এক ধরনের শব্দালংকার।
৪। কবিতায় উপমার ব্যবহার হয়েছে। যেমন: 'জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা'-এখানে জ্যোৎস্নাকে চাদরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এটি এক ধরনের অর্থালংকার।
৫। কবিতাটির লয় ধীর গতির।
৬। কবিতাটি গদ্যছন্দে লেখা। সাধারণ গদ্যের চেয়ে এর বাক্যগঠন আলাদা। আবৃত্তি করার সময়ে এই কবিতার ভাষার মধ্যে এক ধরনের সুর ও সুক্ষ্ম তাল টের পাওয়া যায়।
৭। চরণগুলোর পর্ব-বিন্যাস এ রকম:
/আসমানের তারা সাক্ষী
/সাক্ষী এই জমিনের ফুল, এই
নিশিরাইত/বাঁশবাগান /বিস্তর জোনাকি সাক্ষী
/সাক্ষী এই জারুল জামরুল, সাক্ষী
পুবের পুকুর, তার ঝাকড়া ডুমুরের ডালে স্থির দৃষ্টি
মাছরাঙা /আমাকে চেনে
/আমি কোনো অভ্যাগত নই।
খোদার কসম আমি ভিনদেশি পথিক নই
/আমি কোনো আগন্তুক নই।
নির্মলেন্দু গুণ (জন্ম ১৯৪৫) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কবি। 'প্রেমাংশুর রক্ত চাই', 'না প্রেমিক না বিপ্লবী', 'দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী', 'বাংলার মাটি বাংলার জল' ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের নাম। নিচের কবিতাটি কবির 'চাষাভুষার কাব্য' থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
নির্মলেন্দু গুণ
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: 'কখন আসবে কবি?'
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
তাহলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তাহলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে,
ফুলের বাগানে ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি, মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত। তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ।
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেদিন সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর।
না পার্ক না ফুলের বাগান, এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যে রকম,
সে রকম দিগন্তল্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা,
সবুজে সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে।
কপালে কজিতে লালসালু বেঁধে।
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁখে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক।
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্নমধ্যবিত্ত, করুণ কেরানি, নারী, বৃদ্ধ, ভবঘুরে
আর তোমাদের মতো শিশু পাতা-কুড়ানিরা দল বেঁধে।
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: 'কখন আসবে কবি?' 'কখন আসবে কবি?'
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়াবেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
'এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।
(সংক্ষেপিত)
আরও দেখুন...